বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জাপানের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন চাকরির বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। দেশটিতে ইদানীং জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ বাড়ি পড়ে আছে যেখানে থাকার মতো কেউ নেই। হয় তারা অবিবাহিত অথবা বিয়ের পরেও স’ন্তা’ন নেয়নি। ফলে বৃদ্ধ হয়ে মৃ*ত্যে’র পরে তাদের কোনো ওয়ারিশ নেই। এমনও হচ্ছে ম*রে ঘরে পড়ে লা*–শ প*চে আছে কিন্তু সেই খবর কেউ জানে না। তাছাড়া স’ন্তা’ন নেওয়ার প্রবণতা কমায় তরুণ লোকের সংকট দেখা দিয়েছে।

কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের দরকষাকষির ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এক জরিপে দেখা যায় অর্ধেকের বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠানই এখন দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে। এই সুযোগে তরুণরা চাকরি ছেঁড়ে আরো ভালো বেতনের জন্য ছুটছে। আর প্রতিষ্ঠান হয়তো বাধ্য হয়েই বড় বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। কিছু সময় গেলে সেই প্রতিষ্ঠান ছেঁড়ে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকছে। তাই জাপানিদের চাকরি ছাড়া যেন একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। এমনকি একসময় অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে বিবেচিত সরকারি চাকরিতেও তরুণ মেধাবীদের আকর্ষণ কমেছে।

সামনে হয়তো আরো কঠিন সময় আসছে। মেয়েরা আজকাল স’ন্তা’ন নিতেই চায় না। তাই তরুণ জনসংখ্যা আরো কমবে। আর এতে জবের মার্কেটে তরুণদের অভাব আরো বাড়বে। তখন চাকরি ছাড়াদের সংখ্যা আরও ভারি হবে।

সনাতনী ‘সালারিম্যান’ সংস্কৃতির উত্থান ঘটে ২য় বিশ্ব’যু*দ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক উত্থানের সময়, যখন কর্মীরা আজীবন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুগত থাকতেন। তাদের কর্মনিষ্ঠার প্রতীক ছিল দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং অফিস-পরবর্তী সামাজিকতা।

১৯৮০ সালের দিকে এক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে এক এনার্জি ড্রিংকের প্রচারণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল: ‘আপনি কি ২৪ ঘণ্টা লড়তে পারবেন?’

কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। কর্মীদের সন্তুষ্টি ও কর্মজীবনের ভারসাম্যকে গুরুত্ব দিয়ে তারা নতুন পথ খুঁজছে। পিতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে দশ বছর আগে যেখানে এই হার ছিল ২ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

দেশটির তরুণ কর্মীরা এখন অফিসে ‘হাতারাকানাই ওজিসান’ বা ‘কাজ না করা প্রবীণদের’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন, যারা উৎপাদনশীল না হয়েও কঠোর শ্রম আইনে রক্ষিত। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০ ও ৩০-এর কোঠায় থাকা প্রায় অর্ধেক কর্মীই এমন সহকর্মীর উপস্থিতিকে অফিসের মনোবল কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।